রংপুর-সৈয়দপুরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ৫০টি এ্যাম্বুলেন্স এসে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে তাৎক্ষনিকভাবে তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
আহত রোগীদের পেয়ে শুরু হয় চিকিৎসকদের দৌড়-ঝাঁপ। এ দুর্ঘটনায় চালক-হেল্পারসহ নিহত ১৩ জন। নিহতরা হলেন, মোঃ আলী কালা (৩০), আব্দুল মতিন (৩২), চন্দন রায় (৩৫), শিক্ষিকা জিন্নাত আরা (৩৮), আকুল মিয়া (২৫), লিটন হোসেন (২৬), তৈয়ব মিয়া (৪২), মমদেল (৪০),সুবোধ চন্দ্র (৩৫), অজ্ঞাত ৪ জন। আহত প্রায় ৫৬ জন। এদের মধ্যে আশংঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে আরো ১০ জন।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা থেকে ছেড়ে আসা ঠাকুরগাঁও গামী যাত্রীবাহি বাস সাইমন এক্সক্লুসিভ পরিবহন গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের তারাগঞ্জের ইকরচালী এলাকায় আসলে চাকা ফেটে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে দিনাজপুর থেকে রংপুরগামী যাত্রীবাহি বাস তৃপ্তি পরিবহন সাথে মুখোমুখি সংর্ঘষ হয়।
বিকট শব্দে গাড়ি দুটি যেনো দুমড়ে-মুচড়ে একটি বাসের ভেতরে অপর বাস ঢুকে যায়। ঘটনাস্থলেই ৭ জনের মৃত্যু হয়। এ সময় আহতদের আহাজারি কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। তাৎক্ষনিক আশপাশের লোকজন ছুটে এসে নিহত ও আহতদের উদ্ধার কাজ শুরু করে।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মী, রংপুরের জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার, পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক, তারাগঞ্জ উপজেলার কর্মকর্তা জিলুফা ইয়াসমিনসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন।
সে সময় দুর্ঘটনা কবলিত এলাকায় বাসটি পড়ে থাকায় এবং হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে সড়ক চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দিনাজপুর, ঠাঁকুরগাও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, ঢাকা, বগুড়া, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শত শত যানবাহন আটকে পড়লে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। সড়ক দুর্ঘটনার কয়েক ঘন্টা ধরে যাত্রী উদ্ধার কাজ চলে।
আহতদের চিকিৎসা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন হাসপাতালের পরিচালক, চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়রা। এক আহত বাবু মিয়ার মা সুফিয়া বেওয়া বলেন, ‘হামার ওপর এ্যানকা ক্যান হইল। হামরায় তো কারো ক্ষতি করি নাই। এ্যালায় হামাক কায় দেকপে। ক্যানকা করি খরচ চলবে’।
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য তাৎক্ষনিকভাবে নিহতের পরিবারদেরকে রংপুরের জেলা প্রশাসক ৫ হাজার টাকা ও তারাগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৪ হাজারসহ জনপ্রতি ৯ হাজার টাকা এবং ৪৮ আহত পরিবারদেরকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২ হাজার ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১ হাজার টাকাসহ জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়।
রংপুরের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার সাংবাদিকদের জানান, নিহত ও আহতদের আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আশপাশ জেলার প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানানো হবে। নিহতদেরকে তাদের নিজ বাসায় সুষ্ঠুভাবে পৌঁছে দেয়া যায় সে ব্যবস্থা করা হবে।
এছাড়া আহতরা যাতে করে সুচিকিৎসা পায় চিকিৎসকদেরকে বিশেষভাবে বলা হয়েছে। যেনো সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়ে আহতরা তাদের বাসায় ফিরে যেতে পারে।