ব্রহ্মপুত্র নদ ও ধরলা নদীর পানি বাড়তে থাকায় কুড়িগ্রামে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।জেলার ৭ টি উপজেলার ৫০ টি ইউনিয়নের প্রায় ২ লক্ষ’র অধিক মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছে। প্রায় ১ মাস যাবত বন্যা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় মানুষের বাড়ির আঙ্গিনা, উঠোন এমনকি থাকার ঘরের ভেতরেও পানি প্রবেশ করেছে। ফলে রান্না-বান্না করা অসম্ভব হওয়ায় মানুষ খাবার সঙ্কটে ভুগছে। বিশেষ করে শিশুদের অবস্থা অারও বেশি ভয়াবহ।
সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্লাবিত হয়ে পড়েছে নতুন নতুন এলাকা। পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ দিন পার করছে কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী, উলিপুর, রৌমারী, রাজীবপুর ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরী উপজেলার ৫০ ইউনিয়নের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা।
এক সপ্তাহ ধরে কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর পাকা সড়কসহ কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে থাকায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। ভাঙন দেখা দিয়েছে যাত্রাপুরহাটের তীর রক্ষা বাঁধে। শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
এদিকে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সর্বত্রই চলছে খাদ্যের জন্য হাহাকার।
রৌমারী উপজেলার এক বৃদ্ধা বলেন, “অাইগন্যাত (অাঙ্গিনায়) পানি উঠছিল।রাইতত ঘরের দরজা নাগে ঘুমাছি। উঠি দেহি পানি দিয়া ঘর ভাসি গেইছে।”
পানিবন্দী একজন বয়স্ক নারী সোসাইটিনিউজকে বলেন, “ হামরা (অামরা) মেলাদিন থাকি আন্দা-বাড়ি কইরবার পাইনা, এইজন্যে বাড়িত সগাই (সবাই) খুব কষ্টে আছি। কাইও হামার খোজ-খবরও নেয়নাই এলাও।”
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আমি বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছি। বন্যার্তদের দুর্ভোগ লাঘবে যা করণীয়, তা আমরা করব।’
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জানান, বন্যার্তদের জন্য আট লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও ১৯২ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা বিতরণ করা হয়েছে। আরো এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে, যা ঢাকা থেকে সড়কপথে কুড়িগ্রামে আসছে। এসব শুকনো খাবার হাতে পাওয়ামাত্রই বিতরণ করা হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৩৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।