Sunday, May 28, 2017

লালাবাজারে স্বাগতম লোডশেডিং


আকাশে বিদ্যুৎ চমকানোসহ ঝড়ো হাওয়া বইতে থাকলে, কালো মেঘের আনাগোনা দেখলে অথবা বৃষ্টি পড়তে শুরু করলে চুনারুঘাটে শুরু হয় বিদ্যুৎ এর অনবরত লোডশেডিং। ঝলমলে রোদেলা দিনে লোডশেডিং হলে আমরা বুঝে নিই যে, আবহাওয়া এমন ঝকমকে থাকবে না, কিছুক্ষনের মধ্যে ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, লালাবাজারে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আমাদের জন্য দুইটি সেবা নিশ্চিত করেছে। প্রথমত, মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা ও দ্বিতীয়ত, অত্র অঞ্চলের আবহাওয়ার পূর্বাভাষ জানানো। কিন্তু, লালাবাজারে বিদ্যুৎ-এর ঘনঘন লোডশেডিং বা দিনে রাতে বিদ্যুতের চমকিত আসা-যাওয়ার ফলে অসহনীয় হয়ে উঠেছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন। কোন কারন বা উপলক্ষ ছাড়াই প্রতিদিন গড়ে ৫০/৬০ বার বিদ্যুৎ বিদ্যুতের সংযোগ প্রদান ও বিচ্ছিন্নতায় মনে হয় আলোকসজ্জার দায়িত্ব নিয়ে বিজলীবাতি পরিচালনা করে বিদ্যুৎ বিভাগ।

উল্লেখ্য যে, দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকলেও মিটার ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয় পল্লী কিদ্যুৎ সমিতি নির্ধারিত মূল্যে। সমাজকর্মী সিদ্ধার্থ শংকর আচার্য্য অভিযোগ করেন যে, দিনের এক-তৃতীয়াংশ সময় বিদ্যুৎ ব্যবহার না করলেও প্রতিমাসেই অতিরিক্ত বিল দিতে হচ্ছে। এছাড়াও, সংযোগ পরীক্ষা করার নামে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গ্রাহকদের সাথে নগ্ন প্রতারনা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও সিদ্ধার্থ আচার্য্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে, স্বাভাবিক ও জরুরী চলাফেরা, অফিস-আদালতের কাজ, পড়াশুনা, গৃহস্থালী কাজ, ব্যবসা-বানিজ্যসহ সকল মানবিক কাজকে অসম্ভব করে দিচ্ছে লোডশেডিং এর অন্ধকার। বিদ্যুৎ নির্ভর বাসস্থানগুলোর আলো-বাতাস-পানি বন্ধ থাকার মত অনাকাংখিত ঘটনায় অতিষ্ট হয়ে পড়ছেন বিদ্যুতের গ্রাহক ও ভুক্তভোগীরা। এছাড়া সিলেটের সর্বত্র প্রায়ই দেখা যায়, বাসা-বাড়ি, খাবারের দোকানের লোকজন পানি সংগ্রহ করতে বালতি, কলসী, হাড়ি-পাতিল নিয়ে ছুটাছুটি করছেন। লোডশেডিং-এ গা সওয়া মানুষেরা নিজ দায়িত্বে মেনে নিয়েছেন এই নির্লজ্জ ও অনাহুত অবস্থাকে। বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে আমরাও এক কাঠি এগিয়ে আছি। ঘরেঘরে, সোলার সিষ্টেম, আইপিএস, জেনারেটর, চার্জার লাইট-ফ্যান, মোমবাতি, কেরোসিন নিয়ে প্রস্তুত থাকেন সচ্ছ্বল পরিবার ও প্রতিষ্ঠানগুলো।

অনেকে মনে করেন, এসব উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও বাতি প্রস্তুতকারী ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে বিদ্যুৎ বিভাগের অসৎ কর্মীদের অবৈধ যোগাযোগ রয়েছে। কারন, বিদ্যুতের একবার চকিত আসা-যাওয়ায় প্রতিদিন অন্তত ১শতটি বৈদ্যতিক বাতি নষ্ট হয় এবং এতে নতুন বাতি কেনার বাধ্যবাদকতা সৃষ্টি হয়। কল-কারখানাসহ সকল বিদ্যুৎ-নির্ভর স্থাপনা ও ব্যক্তির জন্য লোডশেডিং কি প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তা বর্ননা করাও বাহুল্য। বিদ্যুৎ যেমন কখনও স্থির থাকেনা তেমনি মানুষও থেমে থাকে না। এখন আমরা বলতে শিখেছি, বিদ্যুৎ আসলে যায় না, মাঝে মাঝে আসে। আগেও শিখেছিলাম, এখন নাটক-সিনেমার সৌজন্যে টিভিতে পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়। আমরা মেনে নিয়েছি তাই, লোডশেডিং অনবরত চলছে। কদাচিৎ, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি লোডশেডিং এর আগাম ঘোষনা দিয়ে গ্রাহকদের জানিয়ে দেন।

কদাচিৎ এসব ঘোষনায় বিদ্যুৎ বিভাগের কোন দূরাভিসন্ধি লুকিয়ে আছে বলে অনেকে মন্তব্য করেন। মাইকযোগে এসব ঘোষনাকে জাতির প্রতি উপহাস বলে মন্তব্য করেন, ছাত্র ইউনিয়নের আশির দশকের অন্যতম সংগঠক ও সংস্কৃতি কর্মী, বিদ্যুৎ পাল। এছাড়াও লোডশেডিংকে জাতির নিযতি উল্লেখ করে এর, থেকে ফায়দা লুঠের পরামর্শ দেন তিনি এবং মোমবাতি, চার্জার, সোলার ও ব্যাটারী ইত্যাদির ব্যবসা দ্বারা অভূতপূর্ব উন্নতি সম্ভব বলেও তিনি এক প্রকার ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এতসব অসঙ্গতি ও নির্বিচার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা ও দেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থায় এটা স্পষ্ট যে, এই দেশে কোনদিনই বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে না। গরমে-ঘামে-অপেক্ষায়-তিক্ততায় অস্থির সিলেটের মানুষ কি বিদ্যুৎ-এর অনবরত লোডশেডিং এর কবল থেকে রেহাই পাবেনা?

মূলপাতা

আন্তর্জাতিক

এক্সক্লুসিভ