সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে বুধবার সন্ধ্যায় শুরু হয়েছে বাউল করিম উৎসব। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আয়োজিত এ উৎসবের প্রথম দিন রিতিমতো মাত করে দিলেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার এক অখ্যাত বৃদ্ধা।
নাম তার সুষমা দাস। আয়োজকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তার বয়স ৯০ ছাড়িয়ে গেছে।
করিমের উজান ধলইর পার্শ্ববর্তী চাকুয়া গ্রামেই তার বাড়ী। অর্থমন্ত্রীর উদ্বোধন ঘোষনার পরপরই মঞ্চে নিয়ে আসা হয় সুষমা দাসকে। মনে হলো কেবল সম্মান জানাতেই তাকে মঞ্চে নিয়ে আসা হয়েছে। অনেকে এ রকম ফিসফাসও করছিলেন। এ বয়সে বড়জোর দু’একটা টানই দেয়া তার পক্ষে হয়ত সম্ভব।
কিন্তু না। সবাইকে অবাক করে দিয়ে সুষমা গান ধরলেন এবং গাইলেন গাওয়ার মতোই।‘ এখন আমি কি করিবরে প্রাণনাথ তুমি বিনে’। কন্ঠের মাধুর্যের সাথে সুর-তাল-লয়, তিনি এমন ভাবে গাইলেনযে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলেন উপস্থিত সহস্রাধিক শ্রোতা-দর্শক।
গানটি শেষ হতেই তাকে উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান জানানোর জন্য যখন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে আবার মঞ্চে ডাকলেন উপস্থাপক, তিনি রাজিই হলেন না। বরং আরেকটি শুনার আব্দার করলেন। দর্শকরাও তুমুল করতালি দিয়ে মন্ত্রীকে সমর্থন জানালেন।
অগত্যা আবার গান ধরলেন বৃদ্ধা সুষমা। এবার গাইলেন ‘এখন ভাবিলে কি অইবগো যা হবার তা হয়ে গেছে’।
গান শেষে মঞ্চে উঠলেন আসাদুজ্জামান নূর। কদমবুচি করলেন সুষমাকে। তিনি ও তার গলা জড়িয়ে ধরলেন। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়ায় জানালেন তিনি মুগ্ধ, অভিভূত! ‘আমি তার সাধনার প্রতি মাথানত করে শ্রদ্ধা এবং অভিনন্দন জানাই।
কাহিনী এখানেই শেষ নয়। মঞ্চ থেকে আসাদুজ্জামান নূর তাকে ধরে ধরে নামালেন। এক কোনায় দাঁড়িয়ে কিছু চাওয়ার আছে কি না বার বার জানতে চাইলেন। কিন্তু সুষমা তার গাওয়া গান রেকর্ড করা ছাড়া আর কিছু চাইলেন না। মন্ত্রী আয়োজকদের একজনকে এ মাসের ভেতর তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেছেন। আর কিছু আর্থিক সহায়তার জন্য একটি দরখাস্ত শিঘ্রই তার কাছে জমা দিতেও বলেছেন তিনি।
জীবনের শেষ লগ্নে এমন সম্মাণ পেয়ে সুষমা দাস যে সুখি সে তো বলাই বাহুল্য। আর দর্শকরা অভিভূত তার গান শুনে।
এমন একজনকে অনুষ্ঠানে নিয়ে আসার জন্য আয়োজকরা ও বিশেষ ধন্যবাদ পেতে পারেন।