Friday, February 26, 2016

‘আমি মরে যাচ্ছি, মা-বাবার পাশেই কবর দিও’



ঢাকা: ‘ভাই, আমি আর বাঁচব না, মরে যাচ্ছি। মারা গেলে মা-বাবার পাশেই আমাকে কবর দিও তুমি।’
শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে রাজধানীর উত্তরায় ১৩ নম্বর সেক্টরের (রোড নম্বর-০৩) ৮ নম্বর বাড়ির সপ্তম তলায় গ্যাস লাইনের বিস্ফোরণে দগ্ধ গৃহবধু সুমাইয়া খানম (৪০) এভাবেই বড় ভাইয়ের কাছে আকুতি জানালেন।
পরে তার বড়ভাই আবুল খায়ের খান হামিম কান্নাজড়িত গলায় বোনের বলা কথাগুলো বাংলানিউজকে জানান।
আবুল খায়ের খান হামিম বলেন, আমাদের বাড়ি বরিশাল সদরের নবগ্রাম রোডে। তাবলিগে যোগ দিতে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে এসেছিলাম। সেখানে থাকা অবস্থাতেই দুর্ঘটনার খবরটা পাই। দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ছুটে আসি।
তিনি বলেন, আমার বোন বারবার তার সন্তান-স্বামীর খোঁজ করছিলেন। তখন আমি তাকে সান্ত্বনা দিতে গেলে ও বলে ওঠে ‘আমাকে সান্ত্বনা দিও না। আমি জানি ওরাও ভাল নেই।’
আবুল খায়ের খান হামিম বলেন, আমার বোন চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই উত্তরার বাসাটি ভাড়া নেয়। বাসায় ওঠার পর থেকেই নাকি সেখানে গ্যাসের গন্ধ পেতো ওরা। বিষয়টি বাড়ির মালিক মির্জা দেলোয়ার হোসেনকে বারবার জানানো হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতেও ওই গ্যাস লিকেজের বিষয়টি জানানো হয়।


তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সময়মত মেরামতের ব্যবস্থা নিলে আমাদের এ মর্মান্তিক ও করুণ দৃশ্য দেখতে হতো না।
গ্যাস লাইনের বিস্ফোরণে দগ্ধ সুমাইয়ার স্বামী মো. শাহনেওয়াজ (৫০) ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার আগে ছোট ছেলে জায়ান বিন নেওয়াজকে আমার কোলে দিয়ে তার মা রান্নাঘরে যায়। আমরা তখন ডাইনিং রুমে ছিলাম। আমাদের বাকি দুই সন্তান তখন ঘুমিয়ে। স্ত্রী রান্নাঘরে গ্যাসের চুলা জ্বালানোর দুই থেকে তিন মিনিট পরেই বিকট আওয়াজের শব্দ শুনতে পাই। একই সময় আগুনে ঝলসে যাই আমরা।

‘তখনও সন্তান আমার কোলে, কি হয়েছে, আমি বুঝতে পারছি না। চিৎকার দিয়েই দরজা খুলে দেই। আমার স্ত্রীকে নিয়ে নিচে নামতে নামতে হঠাৎ করে মনে পড়ে যায়, আমার আরও দুই কলিজার টুকরা তো ঘুমিয়ে আছে। চিৎকার করে বলতে থাকি, বাঁচাও বাঁচাও, আমার দুই সন্তানকে বাঁচাও। ওরা ঘুমিয়ে আছে।’

শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরের এ দুর্ঘটনায় সুমাইয়া খানম ও মো. শাহনেওয়াজ ছাড়া আরও দগ্ধ হয়েছেন তিনজন। এরা হলেন- এই দম্পতির ছেলে সালিন বিন নেওয়াজ (১৪), জারিফ (১০) ও ১৪ মাস বয়সী শিশু জায়ান।

এদের মধ্যে শুক্রবার বিকেল ৫টায় সালিন বিন নেওয়াজ ও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জায়ান বিন নেওয়াজ (১৪ মাস) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।
ঢামেক বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আগুনে মো. শাহনেওয়াজের শরীরের ৯৫ শতাংশ, সুমাইয়া খানমের ৯০ শতাংশ, সালিনের ৮৮ শতাংশ ও জায়ানের শরীরের ৭৪ শতাংশ পুড়ে গেছে।

মূলপাতা

আন্তর্জাতিক

এক্সক্লুসিভ