Thursday, February 25, 2016

মায়া বাড়িয়ে চলে গেল ৬ তলা থেকে ফেলা দেয়া নবজাতকটি



ঢাকা : রাজধানীর বেইলি রোডে ছয়তলা থেকে ফেলে দেয়ার পরও অলৌকিভাবে বেঁচে যাওয়া নবজাতকটি অবশেষে চলেই গেল। সমাজের সামনে লজ্জার হাত থেকে ‘বাঁচিয়ে’ গেল তার মাকে!
বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে শিশুটি মারা গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. খাজা আব্দুল গফুর। শিশুটি ঢামেকের এনআইসিইউর ২১১ নম্বর ওয়ার্ডে (নবজাতক ওয়ার্ড) ভর্তি ছিল।

তিনি বলেন, নবজাতক ‘বেবি অব বিউটি’র অবস্থা কয়েক দিন ধরে খুবই আশঙ্কাজনক ছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়।

গত ১ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বেইলী রোডের বাসায় নিজেই সন্তান প্রসব করে বিউটি আক্তার নামে এক গৃহকর্মী। প্রসবের পর জানাজানির ভয়ে নবজাতককে ৬ তলা থেকে ছুড়ে ফেলে দেয় সে। তবে অলৌকিকভাবে শিশুটি দ্বিতীয় তলার কার্নিশে আটকে বেঁচে যায়। পরে দুপুরে স্থানীয়দের খবরের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ নবজাতকটিকে উদ্ধার করে মগবাজারের আদ-দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যায়।

সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৩ ফেব্রুয়ারি তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে (ঢামেক)। ঢামেকের ২১১ নম্বর নবজাতক ওয়ার্ডে অধ্যাপক ডা. মনিষা ব্যানার্জির তত্ত্বাবধানে তাকে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকেই নবজাতকটিকে নিয়মিত দেখাশোনা করতেন তিনি। তার পাশাপাশি হাসপাতালের নার্সরাও সার্বক্ষণ খেয়াল রাখতেন। নবজাতকটির কোনো অভিভাবক ছিল না বলে ডাক্তাররাই তার নাম দিয়েছিল ‘বেবি অব বিউটি’। হাসপাতালে রেজিস্ট্রি খাতায় এ নাম লেখা ছিল। ডেথ সার্টিফিকেটেও তা-ই উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিভাবকহীন শিশুটিকে অনেকেই দেখে এসেছেন। সংবাদকর্মীদের মধ্যেও সে ছিল আলোচিত নাম। তার মৃত্যুতে হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডটিতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। যেন এক মায়ার শূন্যতা। এ শূন্যতা আদর-ভালোবাসার শূন্যতা। স্বীকৃতিহীন এ নবজাতকটিকে একবার দেখে যে নার্স ডিউটি শেষে বাসায় ফিরতো, যে ডাক্তাররা আলতো হাতে তার শরীরে হাত বুলাতো, তাদের মায়ার জাল ছিন্ন করে চলে গেল। মর্গে ফুটফুটে এ নবজাতকটির নিথর দেহটাকে ঘিরে রয়েছে মানুষের ভিড়। শেষবারের মতো দেখে অনেকেরই গাল গড়িয়ে পড়ছে কষ্টের জল। কেউ কেউ ফেটে পড়ছেন ক্ষোভে।
দায়িত্বরত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. ব্যানার্জি বলেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে সে মারা যায়। চিকিৎসকদের পাশাপাশি ওয়ার্ডের সকলের স্নেহ-ভালোবাসায় সিক্ত ছিল নবজাতকটি। তার উপর সকলের মায়া পড়ে গিয়েছিল।’

এ ব্যাপারে রমনা থানার উপ-পরিদর্শক হূমায়ূন কবীর বাংলামেইলকে বলেন, নবজাতকটিকে ঢামেকের মর্গে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা তার সুরতহাল সংগ্রহ করার পর পোস্টমর্টেম করবে।

নবজাতকটির মৃত্যুতে হত্যা মামলা করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিশুটির মা বিউটি তেজগাঁও ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে আছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হবে কি না তা পরে জানানো হবে।

বিউটি আক্তার জানায়, তার বাবার নাম আবু বকর প্রামাণিক। গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার নওকর গ্রামে। ঢাকায় বেইলী রোডের ২৬ নম্বর প্রোপার্টিজ মেনশনের ৬ তলায় আজমল হক ও ফিরোজা হকের বাসায় ৯ বছর ধরে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছে।

৯ থেকে ১০ মাস আগে কুমিল্লায় বড় বোন লিপি আক্তারের বাসায় বেড়াতে যায় বিউটি। সেখানে তার বোনের স্বামী নীরব ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তাকে ধর্ষণ করে। এতে সে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। কিন্তু এ কথা কাউকে জানতে দেয়নি।

মূলপাতা

আন্তর্জাতিক

এক্সক্লুসিভ