ফাহিম পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদকালে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার খবর প্রকাশের পর তা নিয়ে তুমুল সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
ফাহিমের ‘রহস্যেঘেরা’ এই মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিপুলসংখ্যক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী।
সমালোচনার ঝড় উঠেছে, তার হাত পেছন থেকে হ্যান্ডকাফে বাঁধা ছিল, তা নিয়েও।
ফাহিমকে যখন ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয় ওই সময় তার বুকে গুলির চিহ্ন দেখা যায়। তার পরনে প্যান্ট ও একটি সাদা রংয়ের গেঞ্জি রয়েছে। হাত পেছন থেকে হ্যান্ডকাফে আটকানো।
একের পর এক হত্যাকাণ্ডের যখন সুরাহা করা যাচ্ছিল না, তখন ফাহিম গ্রেফতার হওয়ায় বেশকিছু তথ্য পাওয়া যাবে—এমন আশা ছিল দেশবাসীর। এ প্রসঙ্গে নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ‘বন্দুক, তুমি যুদ্ধ বোঝো, তদন্ত বোঝো না’
শিরোনামে ফেসবুকে লিখেছেন, “মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষক হত্যাচেষ্টার আসামি ফাহিম রিমান্ডে থাকাকালীন শনিবার ভোররাতে 'বন্ধুকযুদ্ধে' নিহত হয়েছেন। মৃত্যুর পর তার হাতে হাতকড়া দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ফাহিমের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। শনিবার সকালে নিজের ফেসবুকে 'বন্দুক, তুমি যুদ্ধ বোঝো, তদন্ত বোঝো না?' শিরোনামে লেখা ওই পোস্টে তিনি বলেছেন, ''যেখানে এই আক্রমণের হাত থেকে আস্তিক নাস্তিক, সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরু, নারী পুরুষ, সিভিলিয়ান পুলিশ কেউই ছাড় পাচ্ছিলো না, যেখানে এটা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তেছিলো এবং আমরা কোনো বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের আলামত দেখছিলাম না, সেখানে মাদারীপুরের মানুষ এক আসামী হাতে নাতে ধরে ফেলার পর আশা করছিলাম ভেতরের কলকাঠির সুলুক সন্ধান করা হবে। সেই স্থলে এই বন্দুকযুদ্ধের কি মানে?'' বুধবারের ওই হত্যাচেষ্টার ঘটনায় বৃহস্পতিবার মামলা দায়েরর পর শুক্রবার কলেজ ছাত্র ফাহিমকে দশ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। সেদিন রাতে জেলার মিয়ারচর এলাকায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ফাহিম। ফারুকী তার ফেসবুকে লিখেছেন, ''যদিও আমি জানি এই শব্দ ব্যবহারের তাৎপর্য কি, তবুও সংখ্যালঘু শব্দটা কেনো জানি আমি নিতে পারি না। সরাসরি হিন্দু বা অন্য যে পরিচয় আছে সেটা লিখলে কি ক্ষতি? আমার কোনো বন্ধুরে লঘু ভাবতে আমার খুবই আপত্তি হয়।'' ''ছোটবেলা থেকেই আমাদের কোনো হিন্দু বন্ধুরে আমরা কখনো লঘু হিসাবে দেখছি বলে মনে পড়ে না। এই ভাবা বা ডাকার মধ্যেই আমি ঝামেলা পাই। আমার মনে হয় এর মধ্য দিয়ে আমি আমার মতোই একজনকে চাপ দিয়ে ছোটো বানাইয়া দিচ্ছি। আমি তখন আর তার চোখের দিকে তাকাইয়া কথা বলতে পারি না।”
সাংবাদিক ফজলুল বারী ফেসবুকে লিখেছেন, “আমাদের ভালো ইচ্ছাগুলোকে করে দেওয়া হচ্ছে প্রশ্নবিদ্ধ! মাদারীপুরে ধরা ফাহিম ছেলেটির রিপোর্টে পড়ছিলাম তাকে নিয়ে নানা জায়গায় অপারেশনে গিয়ে পুলিশ সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য পাচ্ছিল না! আদালতে বিচারককে সে চিৎকার করে বলে এই ঘটনার সঙ্গে সে জড়িত না। স্থানীয় এক নেতা তাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। সাধারণত কোনও জঙ্গে এভাবে কোর্টে বলে না। কিন্তু পুলিশ তাকে মেরে ফেললো ক্রসফায়ারে? স্থানীয় যে নেতার কথা ফাহিম বলেছিল, সে কি পুলিশের জন্য বিব্রতকর ছিল?”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মাদ সকালে খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই ফেসবুকে লিখেছেন, “এই আশংকাটাই করছিলাম। শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলাকারী ফাহিমকে রিমান্ডে নিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে খুন করা হলো। এখন আর কোনো প্রমাণ নেই সুতরাং নানা কাহিনী চালিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। কেউ ধরা না পড়লে যথারীতি অনেক গল্প শুনতাম, কিন্তু গোল বাঁধিয়েছে এলাকার মানুষ ফাহিমকে হাতে নাতে ধরে। পুরোটা না পারলেও ফাহিম কিছুটা সূত্র দিতে পারতো নিশ্চয়ই।
যারা ফাহিমের মতো কিশোর তরুণদের গুম করে এসব অপারেশনে যেতে বাধ্য করে তাদের পক্ষে এরকম অবস্থায় বসে থাকলে চলে না।”