Monday, June 20, 2016

পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত ‘জঙ্গি’ শরিফুলের বাবা যা জানিয়েছেন…



পুলিশের কথিত ক্রসফায়ারে নিহত শরিফুলের ইসলামের বাবা বলেছেন, ” ‘আমার ছেলে যে খারাপ এমন কথা কেউই বলবেন না। সে বেশ ভালো ছাত্র। সে যদি অপরাধী হয়, তবে প্রচলিত আইনে তার বিচার হোক, তাতে ফাঁসি হলে দুঃখ ছিল না। কিন্তু ক্রসফায়ারে কেন হত্যা করা হলো?’

তিনি জানান, শরিফুলের প্রকৃত নাম মুকুল হোসেন রানা। গণমাধ্যমে ছবি দেখে নিজের ছেলেকে চিহ্নিত করেছেন।

এ দিকে পুলিশ দাবি করেছে, নিহত ‘শরিফুল’ লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার প্রধান আসামি এবং জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য ছিলেন।

মুকুল রানা সাতক্ষীরার ধুলিহর ইউনিয়নে বালুইগাছা গ্রামের বাসিন্দা। বাবা আবুল কালাম আজাদ ঘের ব্যবসায়ী। তিনি জানান, মুকুল কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে কি না এ ব্যাপারে তিনি জানতেন না। তিনি বলেন, ‘সে যদি সত্যিকারেই কোনো সন্ত্রাসী বা জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে জড়িয়ে থাকে তবে তা আমাদের কারো জানা নেই।’

তিনি আরোও জানান, ছেলের লাশ নিতে ঢাকায় গেছেন ছেলের মা সখিনা খাতুন, মামা নজরুল ইসলাম ও চাচাতো ভাই রহমত আলী।

আবুল কালাম আজাদ জানান, মুকুল খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। ২০০৮ সালে সে ধুলিহর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে এসএসসি পাস করে। ২০১০ সালে সাতক্ষীরা ডে নাইট কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে পাস করে। এরপর সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে স্নাতক পর্যায়ে ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে। ওই সময়েই মুকুল ঢাকা চলে যায়। বছর দুয়েক আগে ঢাকায় চলে যায় মুকুল। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সদস্য পরিচয়ে যশোরের বসুন্ধরা মোড় থেকে কে বা কারা তুলে নিয়ে গেছে এমন খবর পেয়েছিলেন তিনি। এরপর তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।

‘গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মুকুল যশোরের কোতোয়ালি থানার জগন্নাথপুর গ্রামের মোবারক বিশ্বাসের মেয়ে মহুয়া আক্তারকে বিয়ে করে। সে নিজেই পাত্রীর সন্ধান পেয়েছিল। মহুয়া যশোরের নোয়াপাড়া কওমি মাদ্রাসার ছাত্রী। বিয়ের পর নতুন বউকে নিয়ে ও বাড়িতে আসে। আবার ফিরে যায় জগন্নাথপুরে। এরপর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সে তার স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে আসে। এ সময় বসুন্ধরা মোড় থেকে ডিবি পরিচয়ে মুকুলকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই থেকে সে নিখোঁজ ছিল। মহুয়া থানায় যায় এ বিষয়ে জিডি করতে। পুলিশ তা নেয়নি। পরে ছেলের শ্যালক আমির হোসেন যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি (১৩৪৪/ ২৫.০২.১৬) করেন’, জানিয়েছেন মুকুলের বাবা।

আবুল কালাম আজাদ নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী বলে দাবি করে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ করি। আমি অন্য কোনো দলের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমি ধুলিহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একজন কাউন্সিলর।’

ধুলিহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ওরফে বাবু সানা বলেন, মুকুলের দাদা আমির আলী ডাকাত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর বাবা আবুল কালাম আজাদ দুই বছর আগে আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সদস্য হন। তিনি কাউন্সিলর নন, সক্রিয় রাজনীতিও করেন না। মুকুল সম্পর্কে ভালো মন্দ তেমন কোনো খবর তাঁর কাছে নেই বলেও জানান তিনি।

আবুল কালাম আজাদ জানান, তাঁর প্রথম স্ত্রী মর্জিনা খাতুন এক ছেলে মাসুদ হোসেনকে রেখে মারা যাওয়ার পর তিনি সখিনা খাতুনকে বিয়ে করেন। সখিনার দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে মুকুল বড় ও শারমিন সুলতানা রিমা ছোট। রিমা সাতক্ষীরা মহিলা কলেজে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে লেখাপড়া করছে।

ধুলিহর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম বলেন, ‘২০০৮ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে মুকুল রানার রোল ছিল ২ অথবা ৩। ১৯৯৫ সালে স্থাপিত এই বিদ্যালয় থেকে মুকুলই প্রথম জিপিএ ৫ পেয়ে এসএসসি পাস করে। সে এলাকার ভালো ছেলে বলে জানি।’

মূলপাতা

আন্তর্জাতিক

এক্সক্লুসিভ